রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নে আলাদিপুর গ্রামের মাঝার পাড়া মাঠের মধ্যে নির্মাণ হচ্ছে এই রাস্তা। দীর্ঘ ৭/৮ বছর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পেছনে ঘুরেও রাস্তা নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছেন এলাকাবাসী। অবশেষে তারা শ্রম আর কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে প্রায় ২০০ মিটার রাস্তা বানিয়ে নিচ্ছেন। এতে টাকার যোগান দিতে গিয়ে অনেকে সুদে টাকার ব্যবস্থা করেছেন। তাতে অনেকে দেনার দায়েও পড়েছেন। তবু প্রয়োজনের তাগিদে তারা রাস্তা নির্মাণে পিছপা হননি।
জনপ্রতিনিধিদের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে কেটে গেছে দীর্ঘ ৭/৮ বছর। প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কেউই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। নির্মাণ হয়নি জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি। অবসান হয়নি সাধারণ মানুষের চলাচলের দুর্ভোগ। অবশেষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সেই অবহেলাকে পেছনে ফেলে আলাদিপুরে নতুন বসতিদের নিজেদের উদ্যোগে সরকারি হালটের উপর মাটি ভরাট করে নির্মাণ করছেন রাস্তাটি।
স্থানীয়সূত্রে জানাযায়, আলীপুর ইউপি'র সাবেক চেয়ারম্যান বাড়ির পিছন দিয়ে ইট বিছানো রাস্তার শেষে মোঃ সবুজ মন্ডলের বাড়ি হতে আধ্যাত্মিক বরইতলা ও মোঃ হান্নান খানের বাড়ির পাশ দিয়ে মহাসড়ক পর্যন্ত আলীপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডস্থ ইন্দ্রনারায়নপুর মৌজা ও ৫ নং ওয়ার্ডস্থ আলাদিপুর মৌজার সীমানা বরাবর একটি সরকারি হালট রয়েছে। সেই হালোটের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকের দুই মাথায় রয়েছে বৃহৎ আকারের দুটি খাদ। এবং মাঝের অংশ দেড়শ মিটারের মতো সমতল রয়েছে।
এই হালোটের দুপাশ দিয়ে প্রায় ৭-৮ বছর পূর্ব হতে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ৭/৮টি বসত বাড়ি। নতুন বসতিরা খানা-খন্দে ভরা সেই সরকারি হালোটের খাদের পাড় দিয়েই পায়ে হেঁটে কোন রকমে যাতায়াত করে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে। শুকনো মৌসুমে বাচ্চদের স্কুলে আর বড়দের মসজিদে, হাট-বাজারে ও মাঠের ফসল তুলে আসা-যাওয়ায় বেশ সমস্যা হয়, আর বৃষ্টির মৌসুমে তো দুর্ভোগের অন্তনেই।
দীর্ঘদিনের অবহেলিত ওই হালোটটি মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য কয়েক বছর ধরে এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা ধরে আসছিল ওই নতুন বসতিরা। তাদের আর্তনাদে কেউ সাড়া দেয়নি, তাদের দুঃখ দুর্দশা কেউ দেখতেও আসেনি।
স্থানীয়রা আরও জানান, তারা উপায় না পেয়ে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালের দিকে সবুজ মন্ডলের বাড়ি হতে আধ্যাত্মিক বরইতলা পর্যন্ত প্রায় ২০০ মিটার রাস্তা মাটি ভরাট করে তারা নিজেরাই নির্মাণ করছেন।
আজ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় লক্ষধিক টাকা ব্যয়ে নতুন এই রাস্তা নির্মাণে একটি ভেকু মেশিন দিয়ে হালোটের এক পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করে আরেক পাশে ফেলে ৭/৮ ফুট প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করছেন। রাস্তার দক্ষিণ মাথায় প্রায় ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি খাদ ছিল, সেটির এক দিকেও রাস্তা বেঁধে ফেলেছে। নতুন এই রাস্তা নির্মাণে পরিশ্রমী উদ্যোগকারীদের এলাকার সবাই সহায়তা করেছেন এবং নতুন বসতিরা কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মোঃ হান্নান খান, সবুজ মন্ডল, সালাম শেখ, শামিম সেখ, আপন মোল্লা, মোঃ মিলন, আঃ কুদ্দুস, আঃ আজিজ, জোসনা বেগম, সবুজ মিয়া সহ ৯/১০টি বসত বাড়ির লোকজনের সাথে স্বদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদকের কথা হয়েছে।
রোকনুজ্জামান খান বলেন, বাড়ি থেকে পাকা রাস্তায় উঠতে আমাদের খুব কষ্ট হয়, আর বৃষ্টির মৌসুমে তো কাদা পানির ভিতরে চলাচল করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এলাকাবাসীর থেকে টাকা তুলে ভেকু এনে গত ২ দিন ধরে হালোটের উপর দিয়ে মাটি ভরাট করে রাস্তা তৈরি হচ্ছে, মাটির রাস্তাটি হলে তবুও কোনো রকম চলাফেরা করতে পারবো, পরে সরকার পাকা করে দিলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
রহমত মোল্লা বলেন, বাড়ি করার জন্য একটু জমি কিনেছি রাস্তা না থাকায় ভয়ে বাড়ি করছিনা, আজ যখন রাস্তা হয়েছে এখন দ্রুতই বাড়ি করব। তিনি আরও বলেন, এখানে এসে জানতে পারলাম, এলাকা সবাই মিলে টাকা দিয়ে রাস্তা বানিয়েছেন, ভাবছি আমিও এর অংশীদার হবো। যারা উদ্যোগ নিয়ে এই রাস্তা তৈরি করেছেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
সবুজ খান বলেন, এলাকাবাসীর উপকারার্থে নিজেদের টাকা দিয়ে আমরা কাজ করেছি। সরকারের কাছে অনুরোধ রাখি বাকিটুকু সরকার করে দিলে আমরা এলাকাবাসী বেশ উপকৃত হবো।
মোঃ হান্নান খান বলেন, এখানে দীর্ঘদিন যাবৎ কোন রাস্তা ছিল না, রিকশা-ভ্যান তো দূরের কথা পায়ে হেঁটে যাতায়াতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল, ব্যক্তি উদ্যোগে সবাই মিলে আজকে রাস্তাটি করার চেষ্টা করছে, রাস্তাটি হওয়াতে আমরা এলাকাবাসী উপকৃত হয়েছি। সরকারি উদ্যোগে রাস্তাটি পাঁকা হলে জনগণ আরো বেশি উপকৃত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তরুণ জানান, জনসাধারণের উপকারার্থে এ রাস্তাটি তৈরি করছি। আমি মানুষের ভালোর জন্যই করছি বলে মনে করি। আমার ভালো কাজ করা দেখে যদি কারো হিংসা করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে, তাহলে কিছু বলার নেই। ভেকু দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ করতে আরও দুই দিন সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।
৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্বাস আলী জানান, এই রাস্তা জন্য এলাকাবাসী কয়েক বছর ধরেই আমাদেরকে বলেছে । কাজটা আমাদেরই করার কথা ছিল তবে এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে রাস্তাটির কাজ শুরু করায় আমি লজ্জাবোধ করছি। কাজ যেহেতু শুরু হয়েছে আমি চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে কথা বলে পাকা রাস্তা করার ব্যবস্থা করে দিবো।
আলীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকীকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
স্বদেশ প্রতিদিন /এমআর