২০০০ সালে শুরু হওয়া মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনির নানা অনিয়ম ও গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের কারনে সরকার তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। বিনিয়োগকারী অনেকেই সর্বস্ব বিনিয়োগ করে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
একযুগ পর সাড়ে ৮ লাখ গ্রাহক এক যুগ পর তাদের বিনিয়োগের টাকা ফেরত পাওয়া আশা দেখছেন। খুব দ্রুতই এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ডেসটিনির ব্যাংকে জব্দ থাকা টাকা থেকে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করতে বলেছেন হাইকোর্ট। এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, এই প্রথম কোনো মামলায় টাকা ফেরত পাবেন ভুক্তভোগীরা।
গ্রাহকদের ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিনসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়ে ২০২২ সালের ১২ মে রায় ঘোষণা করেন বিচারিক আদালত। রায়ের শেষাংশে আদালত বলেছেন, হাইকোর্টের একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি করে ডেসটিনির ভুক্তভোগী গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে হবে। রায়ে ডেসটিনির জব্দ থাকা টাকা থেকে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করতে বলা হয়।
এ রায়ের শুধু টাকা ফেরতের অংশের বিরুদ্ধে ডেসটিনির পক্ষে ম্যানেজমেন্ট কমিটির সম্পাদক আজম আলী হাইকোর্টে আপিল করেন। কিন্তু আজম আলী এ মামলার আসামি নন। শুনানি শেষে তার আপিলটি গত সপ্তাহে খারিজ করেন হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের বেঞ্চ। ফলে, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে বিচারিক আদালতের রায় বহাল রয়েছে।
এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, দুদক মামলা করছে, আসামিরা সাজা পাচ্ছেন। কিন্তু ভুক্তভোগীরা কখনো টাকা পাচ্ছেন না। এমন এক ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। এই রায়ের মধ্য দিয়ে একটা দরজা খুলে গেল। এর ফলে ডেসটিনির গ্রাহক, শেয়ার হোল্ডার বা বিনিয়োগকারী বা ভুক্তভোগীরা ওই কমিটির কাছে আবেদন করলে তারা টাকা ফেরত পাবেন। এ ছাড়া, ওই কমিটি ডেসটিনির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্যায়ন করে সেটার ভিত্তিতে টাকা ফেরত দেবে।
গ্রাহকের ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিনকে ১২ বছর, ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদের ৪ বছর, ডেসটিনি-২০০০-এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনের ১০ বছরের কারাদ- ঘোষণা করে ২০২২ সালের ১২ মে রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। রায়ে আরও ৪৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সব আসামির ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা অর্থদ- দেওয়া হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামিরা ডেসটিনির বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা সংগ্রহ করে সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। ফলে, বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী।
ডেসটিনির কর্ণধারদের মধ্যে ৫১ জনকে আসামি করে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের অভিযোগে দুইটি মামলা করা হয়েছে। একটি মামলার নিষ্পত্তি হলেও অপরটি বিচারাধীন। আসামিদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির এমডি রফিকুল আমিন, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ও ডেসটিনি-২০০০-এর কর্ণধার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম প্রায় এক যুগ ধরে কারাগারে আছেন। মামলার আসামিদের মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ, জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল জামিনে আছেন। বাকি ৪৪ জন এখনো পলাতক।
স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর/রকি