তরুণ প্রজন্মের অগ্রগতির অন্তরায় মাদক। মাদকের ছোবলে তরুণ যুবসমাজ যেভাবে অপরাধের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তা অত্যন্ত ভয়াবহ। মাদকাসক্তের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সপ্তম। শিশু-কিশোর-যুবা-বৃদ্ধা-নারী-পুরুষ-নির্বিশেষে মাদকের ভয়াল থাবার শিকারে পরিণত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এই মাদকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন রাজবাড়ির পাংশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)স্বপন কুমার মজুমদার ।
যোগদানের পর থেকে পাল্টে গেছে পাংশা উপজেলার চিত্র। কমেছে সন্ত্রাস, অস্ত্রের ঝনঝনানি, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বাল্যবিবাহ, কিশোর অপরাধসহ নানা ধরনের অপরাধ। বেড়েছে সেবার মান। সেইসঙ্গে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাও বেড়েছে। বিশেষ করে মাদকের উপর জেহাদ ঘোষণা করেছেন এই ওসি। মাদক রোধে অভিযানের সঙ্গে বেড়েছে মাদকদ্রব্য উদ্ধার, আসামি গ্রেপ্তার ও মামলার সংখ্যা। অভিযানের কারণে গা ঢাকা দিয়েছে চিহ্নিত মাদক কারবারিরা। অনেকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে। কারবারিরা নতুন কৌশলে মাদকদ্রব্যের কারবার শুরু করলেও কঠোর নজরদারিতে তা ধরা পড়ছে।
জানা যায়, পাংশা উপজেলার মূল সমস্যা মাদক। স্থানীয় প্রশাসন, এলাকার গণমান্য ব্যক্তি, সাধারণ বাসিন্দাসহ সবাই অতিষ্ঠ এই মাদকে। সবাই একবাক্যে বলতেন, মাদক নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন পাংশা থানার এই ওসি।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, পাংশা উপজেলায় মাদকের বড় স্পট বাহাদুরপুর ইউনিয়নের পাটিকবাড়ি গ্রাম,বাহাদুরপুর স্কুলের আশপাশ,যশাই ইউনিয়ন,পাট্টা ইউনিয়ন,মাছপাড়া ইউনিয়ন,বাবুপাড়া ইউনিয়ন,পৌর এলাকার ৩, ৬,৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড।
এখানে দিনের আলোয় বিক্রি হতো মাদক। বিশেষ করে ইয়াবার বিস্তার বেশি এসব এলাকায়। তবে ওসি স্বপন কুমার মজুমদার যোগদানের পর থেকে কমতে শুরু করেছে মাদক কারবারি।
থানা সূত্রে জানা গেছে,চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত পাংশা থানায় মাদক মামলা হয়েছে ৭৯টি। মামলায় গ্রেফতারও হয়েছেন অনেকে। মামলার ও গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন বড় বড় মাদক কারবারি।
পাংশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০ জন বাসিন্দা বলেন, এখানে দিনের বেলায়ও মাদক বিক্রি হতো। মাদকসেবীদের জন্য সন্ধ্যার পর এর আশপাশের রাস্তা দিয়ে চলাচল করতেও ছিল ভয়। তবে তা এখন অনেকটা কমে এসেছে।
ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন,‘আমার প্রধান চ্যালেঞ্জ মাদক ব্যবসা বন্ধ ও মাদকমুক্ত পাংশা উপহার দেয়া। বলতে পারেন মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছি। এতে পাংশার অনেকেই ক্ষুব্ধ। তবে আমি বদ্ধপরিকর। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমি নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। নিজে অভিযানে যাচ্ছি। যেখান থেকেই অভিযোগ আসছে, সময়ক্ষেপন না করে সেখানেই অপারেশন চালাচ্ছি। যদিও রিস্ক থেকে যাচ্ছে তবুও পিছু হটছি না।’
এখানে মাদকের অনেকগুলো স্পট রয়েছে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়াতেই মূলত মাদক ব্যবসা হতো। নারী মাদক ব্যবসায়ীও জড়িত। তবে বিগত কয়েকমাসের অভিযানে অনেকটাই কমে এসেছে। যতদিন এখানে থাকবো মাদকের ব্যাপারে কোনো আপসে যাবো না।’
স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর