>> ধরাছোঁয়ার বাহিরে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী
>> সুবিধা আদায়ে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধাচরণকে কৌশল হিসেবে নিয়েছেন
>> ২০১৫ সালে কথিত অভিযোগ তুলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানান রেজাউল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা ও ইসলামী দলটির নিবন্ধন বাতিলের জন্য আদালতে মামলা করার কারণে আলোচিত ছিলেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী। ইসলামী দলের সঙ্গে প্রতারণা করাই ছিল তার উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার। শুধু তাই নয়, ডক্টরেট না করেও নিজের নামের আগে ডিগ্রি ব্যবহার করেন। দুর্নীতি আর প্রতারণায় ‘পাকা’ খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন এলাকায়। এসব প্রতারণার কারণে তার বিরুদ্ধে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। গত শনিবার (৯ নভেম্বর) তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, মহাসিচিব রেজউল হকসহ ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে পাইন্দং ইউপির সাদ্দাম হোসেন নামে এক ব্যক্তি ফটিকছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আহমেদ।
জানা গেছে, ২০১০ সালে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী বাদী হয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৫ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পরবর্তী সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। এই মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে মাওলানা মতিউর রাহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি হয়। ২০১৫ সালে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন এমন অভিযোগ তুলে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের জন্যও তার ব্যাপক ভূমিকা ছিল।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শরীক দল হয়ে রাতারাতি দুর্নীতির গডফাদার বনে যান কথিত পীর রেজাউল হক। লাকসাম উপজেলা ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় প্রভাব খাটিয়ে গড়ে তুলেন অপরাধ চক্র। ধর্মের কথা বলে নিজে মানেন না ধর্মের কোনো কিছুই। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি সম্পত্তি দখল ছাড়াও নিজের আপন চাচাতো ভাই-বোনদের সম্পদ দখলেও ছিলেন পটু। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গড়ে তুলেন কালো টাকার পাহাড়। ক্ষতার দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে বিপুর অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়েছেন। এসব কালো টাকা বেশিরভাগ ব্যবহার করেছেন তার অপকর্মের জন্য। ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রামে গড়ে তুলেন বিপুল পরিমাণে সম্পদ।
তার নিজের গ্রাম দোগাইয়ার স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে জানা যায়, লাকসামে দোগাইয়া আশরাফিয়া আলীম মাদ্রাসা, মসজিদসহ বিশাল ওয়াকফ এস্টেট ওছিয়তকৃত দলীলের তোয়াক্কা না করেই এস্টেটকে নিজের আয়ত্তে রাখার জন্য অর্থের বিনিময়ে ওয়াকফ প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের দিয়ে অবৈধভাবে মতোয়াল্লীর পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য পায়তারা করে চলছেন।
এইদিকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের পর রেজাউল হককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিভিন্ন সময় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার বিভিন্নস্থরের জনগণ। মানববন্ধন থেকে বক্তরা বলেন, ছাত্রদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও থেমে নেই কথিত পীর রেজাউল করিমের অপরাধ চক্র। এ সময় মানববন্ধন থেকে তারা রেজাউল হকের ফাঁসির দাবি জানান।
বক্তরা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম সহযোগী ১৪ দলীয় জোট নেতা রেজাউল হক চাঁদপুরী আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে ঢাকা-চট্টগ্রামে একাধিক মামলা হয়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোগাইয়া মাদ্রাসার সিনিয়র এক শিক্ষক বলেন, বিগত ১৬ বছরে সরকারি মাঠ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানসমূহকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে ফ্যাসিবাদী সরকার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর পরই, কেন্দ্রীয়ভাবে মাঠ পর্যায়ে সরকারের অধীনস্থ স্কুল, মাদ্রাসা কলেজসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃত্বের প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রধানদের অপসারণ করা হয়। এতে, বিগত গনধিকৃত আওয়ামী সরকারের নিয়োগ প্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানসমূহ সুষ্ঠু ব্যাবস্থাপনা নিশ্চিত হবার সুযোগ সৃষ্ট হয়। মাঠ পর্যায়ে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। দুঃখজনক ভাবে হলেও সত্যি, কুমিল্লা লাকসামের জনগন লক্ষ্য করছে, বাংলাদেশে তফছীরুল কোরানের সবার পরিচিত মরহুম মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেবসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাবাজ সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী পলাতক থেকেও তার কালো টাকার লম্বা হাতে এখনো আগের মতই অপকর্ম করেই চলছে।
স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর/মাসুম