
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন (বিজেএস) ১৭তম সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এই পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন ও বিচার বিভাগের তিন শিক্ষার্থী সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তারা হলেন:আমিন সরকার ৪৮তম ব্যাচ মেধাক্রম ৮০তম, জীবন নাহার নয়ন ৪৬তম ব্যাচ মেধাক্রম ৩৮তম এবং মো. জাকারিয়া, ৪৫তম ব্যাচ, মেধাক্রম ৯১তম।
এই ফলাফল রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কমিশনের একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সহকারী জজ পদের জন্য গৃহীত ১৭তম বিজেএস পরীক্ষা-২০২৪ এ প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ ১০২ জন প্রার্থীর মেধাক্রম অনুসারে তালিকা প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, মেধাক্রম ১০০ থেকে ১০২ পর্যন্ত নম্বর একই হওয়ায় অতিরিক্ত দুইজন প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়েছে, যার ফলে মোট ১০২ জন প্রার্থীকে সহকারী জজ পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।
এখন পর্যন্ত বিখ্যাত ও অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় সফল হওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সাফল্য অর্জনের পেছনে দীর্ঘ সময়ের কঠোর পরিশ্রম ও সুসংগঠিত প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। তারা তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির মূল উপাদানগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
জীবন নাহার বলেন, “আমি প্রথমে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ, যিনি আমাকে এই সাফল্য উপহার দিয়েছেন। মেধাক্রমে নিজের নাম দেখে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। তারপর নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি বন্ধুরা দিয়ে কয়েকবার তালিকা যাচাই করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই আমি প্রতিটি বিষয়ে আলাদা নোট তৈরি করেছিলাম এবং নিয়মিত পড়াশোনা করেছিলাম। এজন্য বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আমাকে সহায়ক ভূমিকা দিয়েছে। পাশাপাশি মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার কারণে গণিত ও বিজ্ঞানের উপর একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে ওঠে, যা পরীক্ষায় আমাকে সহায়তা করেছে।”
তিনি ভবিষ্যত প্রার্থীদের জন্য পরামর্শ দেন, “একাডেমিক পড়াশোনাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, বিশেষত প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে। অনেকেই ভুলে চাকরির প্রস্তুতির দিকে মনোযোগ দেয়, যা ঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ থেকে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এছাড়া, বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে পরীক্ষার ধরণ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়, যা পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত সহায়ক।”
আল আমিন সরকার তার সাফল্য সম্পর্কে বলেন, “এটি আমার জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা, এবং আমি সফল হয়েছি আল্লাহর অশেষ দয়ায়। আমি থার্ড ইয়ার ফাইনাল শেষ করার পর থেকেই বিজেএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। ফোর্থ ইয়ারে ওই বছরের কোর্সের সাথে প্রথম বছর থেকে বিজেএস সিলেবাসের সকল বিষয় শেষ করেছিলাম। মাস্টার্স চলাকালীন রিভিশনসহ লিখিত ভিত্তিক প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আইন ও সাধারণ বিষয়গুলোর মধ্যে ব্যালেন্স রাখা।”
তিনি আরও বলেন, “জুডিশিয়াল সার্ভিসের পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আইন এবং জেনারেল অংশের মধ্যে সঠিক ব্যালেন্স রাখা জরুরি। আমি মনে করি, যদি কেউ একদিকে অতিরিক্ত সময় দেয় এবং অন্যদিকে অবহেলা করে, তবে সফলতা পাওয়া কঠিন। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে দুই বিষয়ই গুরুত্ব দেয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
মো. জাকারিয়া তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, “এটি ছিল আমার স্বপ্ন এবং আমি সেই স্বপ্নে পৌঁছতে পেরেছি। আগে আমি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম, তবে চাকরি ও পড়াশোনার পাশাপাশি সময় দেওয়া কঠিন ছিল। তবে আমার পরিবারের সবাই, বিশেষ করে আমার সহধর্মিণী, আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি সবসময় বলতেন, ‘তুমি একদিন সফল হবেই, ইনশাআল্লাহ। চেষ্টা করে যাও, আমরা তোমার পাশে আছি।’ এটি ছিল আমার জন্য বিরাট অনুপ্রেরণা।”
তিনি নতুন প্রার্থীদের জন্য বলেছিলেন, “নিয়মিত অধ্যয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একাডেমিক পড়াশোনার ভিত্তি শক্ত হলে সাফল্য অর্জন সহজ হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি সঠিক পরিকল্পনা ও সময় ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাফল্য
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তিন শিক্ষার্থীর সাফল্য বিভাগের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। এই সাফল্য কেবল তাদের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ ও শিক্ষাদান পদ্ধতিরও সফলতার প্রমাণ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা বরাবরই দেশের বিভিন্ন জটিল পরীক্ষায় সফলতার নজির স্থাপন করে আসছে। তাদের সাফল্য অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে, বিশেষ করে বিচার বিভাগে ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুকদের জন্য।
স্বদেশ প্রতিদিন/এমআর