বগুড়ার ধুনট উপজেলার কৃষকরা সোনালী ভুট্টা চাষে নতুনভাবে স্বপ্ন বুনছেন। যাদের আয়ের উৎস ছিল মূলত প্রচলিত ফসল, তারা এখন ভুট্টা চাষের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য বদলাচ্ছেন। সোনালী ভুট্টার চাষ, যা গত কয়েক বছরে কৃষকদের কাছে এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে, ধুনটের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
চালাপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'এ বছর আমি প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি । আমার জমির সব গাছেই দুই তিনটা করে কলা (ভুট্টার ছড়া) এসেছে অনেক ভালো ফলন হবে আশা করছি, । ভুট্টা তোলা পর্যন্ত আমার ৩০ হাজার টাকা খরচের মধ্যেই সব হয়ে যাবে। আশা করছি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বা তার বেশি বিক্রি করতে পারব।'
তিনি আরো জানানা, ভুট্টা চাষে তেমন বেশি পরিশ্রম করতে হয় না এবং অল্প দিনের মধ্যে ভালো একটা ফসল পাউয়া যায়। যা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক।
কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি ২ বিঘা জমিতে রকেট এবং যুবরাজ জাতের ভুট্টা চাষাবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে তবে ভালো ফলন হবে। আশা করছি ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা বিক্রয় করতে পারবো।'
এই এলাকার মাটি ও আবহাওয়া বুট্টা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ধুনট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে, বিশেষত ধুনট সদর, কালেরপাড়া, মথুরাপুর ও চৌকিবাড়ি, এলাংগি, নিমগাছি, গোসাইবাড়ি ইউনিয়নে সোনালী ভুট্টা চাষ করা হচ্ছে। কৃষকরা জানান, ভুট্টা চাষে তাঁদের খরচ কম এবং লাভ বেশি হয়।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার দশটি ইউনিয়নে ২.৫ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লাভজনক হওয়ায় এবং স্থানীয় মাটিতে ভালো ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। অর্থাৎ রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। চলতি বছর আরও বাড়বে। মাত্র চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ভুট্টা চাষ গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
কৃষকরা জানান, ভুট্টা চাষের জন্য সরকারী সহায়তা এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ বাড়ানো হলে তারা অধিক উৎপাদন করতে পারবেন। কিছু কৃষক নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে ভবিষ্যতে ভুট্টা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার মাধ্যমে আরো বেশি লাভবান হওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা সামিদুল ইসলাম জানান, এ বছর ধুনট উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ আবাদ করা হয়েছে । আমরা এবছর ভুট্টা চাষে খুবই আশান্বিত। ফলন ভালো হবে । সর্বোপরি মাঠ পর্যায়ে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তারা আছেন তারা কৃষকের পাশে থেকে কৃষকদেরকে সেবা ও সহযোগীতা করছেন।
স্বদেশ প্রতিদিন/কেএইচ