প্রকাশ: শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫, ৭:১০ পিএম আপডেট: ০৮.০৩.২০২৫ ৭:১২ PM

সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি কাজে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরিবেশবান্ধব ব্লক শতভাগ ব্যবহার করার নির্দেশনা থাকলেও ব্যবহার হয় ২০ শতাংশেরও কম। একই সঙ্গে চলতি বছরের মধ্যে সব উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে শতভাগ ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পোড়া ইটের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও নেই কোনো উদ্যোগ। উল্টো পরিবেশবান্ধব ব্লকের ভ্যাট ইটের তুলনায় ২৩ গুন বেশি। সার্বিক দিক বিবেচনায় পরিবেশবান্ধব ব্লকে আগামী ৫ বছরের জন্যে সম্পূর্ণভাবে কর ও ভ্যাটমুক্ত করার দাবি উদ্যোক্তাদের।
শনিবার (৮ মার্চ) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ কংক্রিট ব্লক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতি। এসময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মো. শাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. মুস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, মনির চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব প্রমুখ।
বাংলাদেশ কংক্রিট ব্লক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি লে. কর্নেল (অব.) মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার দেশের কোটি মানুষের খাদ্য সংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ), ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) এর ধারা ৫(৩ক) এর ক্ষমতাবলে ইট উৎপাদনে মাটির ব্যবহার কমানোর উদ্দেশে সব সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে পরিবেশবান্ধব ব্লক (পোড়ানো মাটির ইটের বিকল্প) ব্যবহারের প্রজ্ঞাপন জারি করে। সরকারের ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০০ ভাগ ব্লক ব্যবহার করার নির্দেশনা রয়েছে। অর্থাৎ চলতি ২০২৫ সালের মধ্যে সব সরকারি উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে শতভাগ ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পোড়া ইটের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, শতভাগ দূরের কথা, এখন পর্যন্ত ব্লক ব্যবহার ২০ শতাংশও কার্যকর হয়নি। সরকারের অধিকাংশ প্রেকৌশল সংস্থা এখনও নির্মাণকাজে ইট ব্যবহার করছে। যথাযথ উদ্যোগ, সংশ্লিষ্টদের অবহেলা এবং বিভিন্ন জটিলতায় তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এ ছাড়া সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বলা আছে, ২০২৫ সালের পর সরকারি কোনো কাজে আর মাটির পোড়ানো ইট ব্যবহার করা হবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। কৃষি এ দেশের অর্থনীতির বৃহত্তম উৎপাদনকারী খাতগুলির একটি, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ নিয়ে গঠিত এবং মোট শ্রমশক্তিতে ৪৩ শতাংশ কৃষি কর্মচারী জড়িত। এ দেশের প্রায় ১০ হাজার বৈধ ও অবৈধ ইটের ভাটা বছরে ৩৫০০ কোটি সিএফটি মাটি ধ্বংস করে ইট প্রস্তুত করছে। এতে দেশের কৃষিজমি আজ হুমকির সম্মুখীন। এছাড়া কয়লা পোড়ানোয় ইটের ভাটার চারিদিকে জমির সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, চাষের জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় ব্যবহার করায় হেক্টর প্রতি প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৬ টাকার ফসল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ৮ দশমিক ১ লাখ হেক্টরে ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৩ কোটি টাকার ফসল কমে যাচ্ছে। কৃষি উৎপাদন হ্রাস ও বায়ুদূষণের ফলশ্রুতিতে আমাদের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য আজ হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, পরিবেশের জন্যে ক্ষতিকর ইটের বিপরীতে পরিবেশবান্ধব ব্লক কারখানা এখন পর্যন্ত কোনো ভর্তুকি বা আর্থিক প্রণোদনা পাচ্ছে না। কংক্রিট ব্লক কারখানার উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেশিনের অংশ প্যালেট আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা আছে। এতে বিনিয়োগ খরচ অনেক বেড়ে যায়। অথচ এই পণ্যে শুল্ক আরোপের যৌক্তিক কারণ নেই। যেখানে পরিবেশবান্ধব সেক্টর হিসেবে প্রণোদনা পাওয়া প্রাপ্য, সেখানে ব্লক ফ্যাক্টরি মালিকেরা পাচ্ছেন হয়রানি আর অতিরিক্ত ভ্যাট ও করের বোঝা। আমরা এ সম্ভাবনাময় খাতকে আগামী ৫ বছরের জন্যে সম্পূর্ণভাবে কর ও ভ্যাটমুক্ত ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
স্বদেশ প্রতিদিন/এনআর/এম