
উজানে ভারতের পানি শাসন নীতির প্রভাবে বাংলাদেশের নদীগুলো বহুআগে থেকেই ধুঁকছে। বগুড়া অংশের যমুনা নদী এলাকাও তার বিপরীত নয়। শুকনো মৌসুম এলেই নাব্যতা সংকটে পড়তে হয় যমুনা নদীতে। পানির অভাবে যমুনা হয়ে যায় বিস্তীর্ণ বালুচর। দেখলে মনে হয় আরবের কোন এক মরুভূমি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এরই মধ্য ১২টি নদীপথ বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া ডুবোচরের কারণে চলমান নৌ-পথ এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র বলছে, প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের যমুনা নদীর বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ২২০ কিলোমিটার। যমুনা নদীতে দিন দিন নাব্যতা সংকট বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ উজানের দেশগুলোর বাঁধ নির্মাণ। ভারত ও চিনের অভ্যন্তরে অন্তত ১৪টি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর গড় গভীরতা প্রায় সাড়ে ৯মিটার। কিন্তু বর্তমানে এর গভীরতার
পরিমাণ কমে অন্তত ৮ মিটার পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, যমুনা নদীতে এখন ধু-ধু বালুচর জেগেছে। হাজার হাজার বিঘা জমি পরে আছে অনাবাদি। পানির অভাবে এসব চরের বাসিন্দারা ফসল আবাদ করতে না পেরে হা-হুতাশ করছেন।
উপজেলার কর্নিবাড়ি ইউনিয়নের শনপচা চর গ্রামের আইনুদ্দিনের বসতবাড়ি-জমি বহু আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি জানান, যতটুকু জমি আছে, সেগুলোতে চাষ করা অনেক কঠিন। শুকনো মৌসুমে যাতায়াত কষ্টের। আর বর্ষার মৌসুমে তো পানিতে ডুবে থাকে।
হাটফুলবাড়ির বালুচরা গ্রামের মাঝি ৬০ বছরের আব্দুল মজিদ। মথুরাপাড়ায় তার মূল বাড়ি। দশ বছর আগে নদীভাঙনের কারণে এই এলাকায় ঘর নির্মাণ করেছেন। পেশায় তিনি নৌকার মাঝি। কিন্তু যমুনায় পানি না থাকায় বছরের কয়েক মাস বেকার থাকতে হয়।
আব্দুল মজিদ বলেন, বর্ষা ছাড়া অন্য সময় কিছু কিছু জায়গায় নৌকা নিয়ে যাই। তাও নৌকার তলা নদীর বালুতে আটকে যায়। এই বয়সে আর অন্য কোনো পেশায় যেতে পারিনি।
উপজেলার ঘাটগুলোর ইজারাদার ও মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রমত্তা যমুনা নদীতে এক সময় জাহাজ চললেও এখন সেখানে ডিঙি নৌকাও চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার ১১টি ইউনিয়নে এরইমধ্যে ১২টি নৌ-পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। ১৪১টি চর গ্রামের ২ লক্ষাধিক মানুষ যোগাযোগ করতে নতুন করে দূর্ভোগে পড়েছেন।
মাইলের পর মাইল বালু পথ মাড়িয়ে পথ চলতে হয় তাদের। রোগী পরিবহনে দুর্ভোগের শেষ নেই। সময় মতো হাসপাতালে রোগী আনতে না পাড়ায় পথেই অনেকে মারা যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সারিয়াকান্দির উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, বাঙ্গালী নদীকে খননের আওতায় আনা হয়েছে। তবে যমুনা নদীতে খননের কোনো প্রকল্প নেই সরকারের কাছে। বিগত সময়ে বিআইডব্লিউটিআই যমুনা নদীর কিছু অংশে খনন সমীক্ষা চালিয়েছিল। কিন্তু সেটি ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ যমুনা নদীতে প্রতি বছর কয়েক টন করে পলি জমা হয়। এ জন্য এখানে খনন করা কার্যকরী হয় না।
প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা ভাটির দেশ, এখান দিয়ে নদীর পানি গড়িয়ে সাগরে পতিত হবে। কিন্তু উজানের দেশগুলোয় অন্তত ১৩ থেকে ১৪টি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তারা পানি ফিল্টারিং করছে। এতে আমাদের এখানে বর্ষার মৌসুমে প্রচুর বন্যা দেখি। আর শুকনো মৌসুমে ধুধু বালুচর। এই মরুকরণ বন্ধে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা ছাড়া উপায় নেই।'
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহরিয়ার রহমান বলেন, শুষ্ক মৌসুম এলেই নদী এমন রুপ নেয়। নদী ড্রেজিং করতে হবে। এজন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।
স্বদেশ প্রতিদিন/কেএইচ